বাংলা ভাষার ধ্বনি ও বর্ণ প্রকরণ
কোনো ভাষার বাক্ প্রবাহকে সূক্ষ্মভাবে বিশ্লেষণ করলে আমরা কতগুলো মৌলিক ধ্বনি (Sound) পাই। বাংলা ভাষাতেও কতগুলো মৌলিক ধ্বনি আছে।
বাংলা ভাষার মৌলিক ধ্বনিগুলোকে প্রধান দুই ভাগে ভাগ করা হয় : ১. স্বরধ্বনি ও ২. ব্যঞ্জনধ্বনি।
১. স্বরধ্বনি : যে সকল ধ্বনি উচ্চারণের সময় ফুসফুস-তাড়িত বাতাস বেরিয়ে যেতে মুখবিবরের কোথাও কোনো প্রকার বাধা পায় না, তাদেরকে বলা হয় স্বরধ্বনি (Vowel sound) । যেমন অ, আ, ই, উ - ইত্যাদি।
২. ব্যঞ্জনধ্বনি : যে সকল ধ্বনি উচ্চারণের সময় ফুসফুস-তাড়িত বাতাস বেরিয়ে যেতে মুখবিবরের কোথাও না কোথাও কোনো প্রকার বাধা পায় কিংবা ঘর্ষণ লাগে, তাদেরকে বলা হয় ব্যঞ্জনধ্বনি (Consonant sound) যেমন- ক, চ, ট, ত, প ইত্যাদি ।
বর্ণ : ধ্বনি নির্দেশক চিহ্নকে বলা হয় বর্ণ (Letter) |
স্বরবর্ণ : স্বরধ্বনি দ্যোতক লিখিত সাংকেতিক চিহ্নকে বলা হয় স্বরবর্ণ। যেমন অ, আ, ই, ঈ, উ, ঊ ইত্যাদি।
ব্যঞ্জনবর্ণ : ব্যঞ্জনধ্বনি দ্যোতক লিখিত সাংকেতিক চিহ্নকে বলা হয় ব্যঞ্জনবর্ণ। যেমন-ক ইত্যাদি ।
বর্ণমালা : যে কোনো ভাষায় ব্যবহৃত লিখিত বর্ণসমষ্টিকে সেই ভাষার বর্ণমালা (Alphabet) বলা হয়।
বিশেষ জ্ঞাতব্য : উচ্চারণের সুবিধার জন্য বাংলা ব্যঞ্জনবর্ণে দ্যোতিত ধ্বনি ‘অ’ স্বরধ্বনিটি যোগ করে উচ্চারণ করা হয়ে থাকে। যেমন ক্ + অ ক, ইত্যাদি। স্বরধ্বনি সংযুক্ত না হলে অর্থাৎ উচ্চারিত ব্যঞ্জনের - = নিচে ‘হস্’ বা ‘হল’ চিহ্ন (,) দিয়ে লিখিত হয় ৷
বাংলা বর্ণমালা
বাংলা বর্ণমালায় মোট পঞ্চাশ (৫০)টি বর্ণ রয়েছে। তার মধ্যে স্বরবর্ণ এগার (১১)টি এবং ব্যঞ্জনবর্ণ ঊনচল্লিশটি (৩৯)টি।
১. স্বরবর্ণ : অ আ ই ঈ উ ঊ ঋ এ ঐ ও ঔ(১১টি)
২. ব্যঞ্জনবর্ণ : ক খ গ ঘ ঙ (৫টি)
চ ছ জ ঝ ঞ (৫টি)
ট ঠ ঢ ঢ ণ (৫টি)
ত থ দ ধ ন (৫টি)
প ফ ব ভ ম (৫টি)
য র ল (৩টি)
শ ষ স হ (৪টি)
ড় ঢ় য় ৎ (৪টি)
মোট ৫০টি
বিশেষ জ্ঞাতব্য : ঐ, ঔ - এ দুটি দ্বিস্বর বা যৌগিক স্বরধ্বনির চিহ্ন। যেমন – . অ + ই = ঐ, অ + উ =ঔ
স্বর ও ব্যঞ্জনবর্ণের সংক্ষিপ্ত রূপ
কার ও ফলা
কার : স্বরবর্ণের এবং কতগুলো ব্যঞ্জনবর্ণের দুটি রূপ রয়েছে। স্বরবর্ণ যখন নিরপেক্ষ বা স্বাধীনভাবে ব্যবহৃত হয়, অর্থাৎ কোনো বর্ণের সঙ্গে যুক্ত হয় না, তখন এর পূর্ণরূপ লেখা হয়। একে বলা হয় প্রাথমিক বা পূর্ণরূপ যেমন – অ, আ, ই, ঈ, উ, ঊ, ঋ, এ, ঐ, ও, ঔ।
এই রূপ বা form শব্দের আদি, মধ্য, অন্ত যে কোনো অবস্থানে বসতে পারে। স্বরধ্বনি যখন ব্যঞ্জনধ্বনির সাথে যুক্ত হয়ে উচ্চারিত হয়, তখন সে স্বরধ্বনিটির বর্ণ সংক্ষিপ্ত আকারে ব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ব্যবহৃত হয়। স্বরবর্ণের এ সংক্ষিপ্ত রূপকে বলা হয় সংক্ষিপ্ত স্বর বা ‘কার’। যেমন ‘আ’–এর - সংক্ষিপ্ত রূপ (1)। ‘ম’-এর সঙ্গে ‘আ’-এর সংক্ষিপ্ত রূপ ‘। ’ যুক্ত হয়ে হয় ‘মা’। বানান করার সময় বলা হয় ম এ আ-কার ( মা)। স্বরবর্ণের নামানুসারে এদের নামকরণ করা হয়। যেমন – আ-কার ( 1 ), ই-কার - (f), ঈ-কার (ী), উ-কার, (( ), ঊ-কার (, ), ঋ-কার ( ), এ-কার ( ৫ ), ঐ-কার ()ৈ, ও-কার (-1), ঔ-কার (−ৌ)। অ-এর কোনো সংক্ষিপ্ত রূপ বা ‘কার’ নেই ।
আ-কার ( 1 ) এবং ঈ-কার (ী) ব্যঞ্জনবর্ণের পরে যুক্ত হয়। ই-কার (f), এ-কার ( 6 ) এবং ঐ-কার ( ? ) ব্যঞ্জনবর্ণের পূর্বে যুক্ত হয়। উ-কার ( ू), ঊ-কার (,) এবং ঋ-কার ( ) ব্যঞ্জনবর্ণের নিচে যুক্ত হয়। ও-কার (−ে1) এবং ঔ-কার (−ৌ) ব্যঞ্জনবর্ণের পূর্বে ও পরে দুই দিকে যুক্ত হয়। উদাহরণ : মা, মী, মি, মে, মৈ, মু, মূ, মৃ, মো, মৌ ।
ফলা : স্বরবর্ণ যেমন ব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে যুক্ত হলে আকৃতির পরিবর্তন হয়, তেমনি কোনো কোনো ব্যঞ্জনবর্ণ ও কোনো কোনো স্বর কিংবা অন্য ব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে যুক্ত হলে আকৃতির পরিবর্তন হয় এবং কখনো কখনো সংক্ষিপ্তও হয়। যেমন-ম্য, ম্র ইত্যাদি। স্বরবর্ণের সংক্ষিপ্ত রূপকে যেমন ‘কার' বলা হয়, তেমনি ব্যঞ্জনবর্ণের সংক্ষিপ্ত রূপকে বলা হয় ‘ফলা’। এভাবে যে ব্যঞ্জনটি যুক্ত হয়, তার নাম অনুসারে ফলার নামকরণ করা হয়। যেমন— ম-এ য-ফলা = ম্য, ম- এ র-ফলা = ম্র, ম-এল- ফলা = ম্ল, ম-এ ব-ফলা = ম্ব। র-ফলা ব্যঞ্জনবর্ণের পরে হলে লিখতে হয় নিচে। ‘ম্র’; আবার ‘র’ যদি ম-এর আগে উচ্চারিত হয়, যেমন— ম-এ রেফ ‘ম’ তবে লেখা হয় ওপরে, ব্যঞ্জনটির মাথায় রেফ (“) দিয়ে। ‘ফলা' যুক্ত হলে যেমন, তেমনি ‘কার’ যুক্ত হলেও বর্ণের আকৃতির পরিবর্তন ঘটে। যেমন - হ-এ উ-কার=হ্ব, গ-এ উ-কার = গু, শ-এ উ-কার = শু, স-এ উ-কার=সু, র-এ উ-কার ব্লু, র-এ উ-কার = রূ, হ-এ ঋ-কার=হ্। =
ক থেকে ম পর্যন্ত পঁচিশটি স্পর্শধ্বনি (Plosive)কে উচ্চারণ স্থানের দিক থেকে পাঁচটি গুচ্ছে বা বর্গে ভাগ করা হয়েছে। প্রতি গুচ্ছের প্রথম ধ্বনিটির নামানুসারে সে গুচ্ছের সবগুলো ধ্বনিকে বলা হয় ঐ বর্গীয় ধ্বনি। বর্গভুক্ত বলে এ ধ্বনির চিহ্ন গুলোকেও ঐ বর্গীয় নামে অভিহিত করা হয়। যেমন-
উচ্চারণের স্থানভেদে ব্যঞ্জনধ্বনির বিভাগ
ধ্বনি উৎপাদনের ক্ষেত্রে মুখবিবরে উচ্চারণের মূল উপকরণ বা উচ্চারক জিহবা ও ওষ্ঠ। আর উচ্চারণের স্থান হলো কণ্ঠ বা জিহ্বামূল, অগ্রতালু, মূর্ধা বা পশ্চাৎ দন্তমূল, দত্ত বা অগ্র দন্তমূল, ওষ্ঠ্য ইত্যাদি । উচ্চারণের স্থানের নাম অনুসারে ব্যঞ্জনধ্বনিগুলোকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয় : ১. কণ্ঠ্য বা জিহ্বামূলীয় ২. তালব্য বা অগ্রতালুজাত, ৩. মূর্ধন্য বা পশ্চাৎ দত্তমূলীয়, ৪. দন্ত্য বা অগ্র দন্তমূলীয় এবং ৫.ওষ্ঠ্য।
ধ্বনি উচ্চারণের জন্য যে প্রত্যঙ্গ গুলো ব্যবহৃত হয় :
১.ঠোঁট ( ওষ্ঠ ও অধর)
২.দাঁতের পাটি
৩.দন্তমূল, অগ্র দন্তমূল
8 অগ্রতালু, শক্ত তালু
৫. পশ্চাত্তালু, নরম তালু, মূর্ধা
৬.আলজিভ
৭.জিহবা
৮.সম্মুখ জিহবা
৯.পশ্চাদজিহবা, জিহবামূল
১০.নাসা-গহ্বর
১১ স্বর-পল্লব, স্বরতন্ত্রী
১২ - ফুসফুস
নিম্নে উচ্চারণ স্থান অনুযায়ী বাংলা ব্যঞ্জনধ্বনির বিভাজন দেখানো হলো :
দ্রষ্টব্য : খণ্ড-ত (ৎ)-কে স্বতন্ত্র বর্ণ হিসেবে ধরা হয় না। এটি ‘ত’ বর্ণের হস্-চিহ্ন যুক্ত (ত্)-এর রূপভেদ মাত্র।
— এ তিনটি বর্ণ স্বাধীনভাবে স্বতন্ত্র বর্ণ হিসেবে ভাষায় ব্যবহৃত হয় না। এ বর্ণে দ্যোতিত ধ্বনি অন্য ধ্বনির সঙ্গে মিলিত হয়ে একত্রে উচ্চারিত হয়। তাই এ বর্ণগুলোকে বলা হয় পরাশ্রয়ী বর্ণ।
ঙ ঞ ণ ন ম-এ পাঁচটি বর্ণ এবং ং ও ৺ যে বর্ণের সঙ্গে লিখিত হয় সে বর্ণে দ্যোতিত ধ্বনি উচ্চারণের সময় ফুসফুস নিঃসৃত বায়ু মুখবিবর ছাড়াও নাসারন্ধ্র দিয়ে বের হয়; অর্থাৎ এগুলোর উচ্চারণে নাসিকার সাহায্য প্রয়োজন হয়। তাই এগুলোকে বলে অনুনাসিক বা নাসিক্য ধ্বনি। আর এগুলোর বর্ণকে বলা হয় অনুনাসিক বা নাসিক্য বর্ণ ।
স্বরধ্বনির হ্রস্বতা ও দীর্ঘতা : স্বরধ্বনি উচ্চারণকালে সময়ের স্বল্পতা ও দৈর্ঘ্য অনুসারে হ্রস্ব বা দীর্ঘ হয়। যেমন— ইংরেজি full—পূর্ণ এবং fool বোকা। শব্দ দুটোর প্রথমটির উচ্চারণ হ্রস্ব ও দ্বিতীয়টির উচ্চারণ দীর্ঘ। হ্রস্ব বর্ণের উচ্চারণ যে দীর্ঘ হয় এবং দীর্ঘ বর্ণের উচ্চারণ যে হ্রস্ব হয়, কয়েকটি উদাহরণে তা স্পষ্ট হবে। যেমন-ইলিশ, তিরিশ, উচিত, নতুন-লিখিত হয়েছে হ্রস্ব ই-কার ও হ্রস্ব – উ-কার দিয়ে; কিন্তু উচ্চারণ হচ্ছে - দীর্ঘ। আবার দীন, ঈদুল ফিত্র, ভূমি-লিখিত হয়েছে দীর্ঘ ঈ-কার এবং দীর্ঘ ঊ-কার দিয়ে; কিন্তু উচ্চারণে হ্রস্ব হয়ে যাচ্ছে। একটিমাত্র ধ্বনিবিশিষ্ট শব্দের উচ্চারণ সবসময় দীর্ঘ হয়। যেমন-দিন, তিল, পুর ইত্যাদি।
যৌগিক স্বর : পাশাপাশি দুটি স্বরধ্বনি থাকলে দ্রুত উচ্চারণের সময় তা একটি সংযুক্ত স্বরধ্বনি রূপে উচ্চারিত হয়। এরূপে একসঙ্গে উচ্চারিত দুটো মিলিত স্বরধ্বনিকে যৌগিক স্বর বা দ্বি-স্বর বলা হয়। যেমন—অ + = অই (বই), অ + উ অউ (বউ), অ + এ = অয়, (বয়, ময়না), অ + ও = অও (হও, লও)।
বাংলা ভাষায় যৌগিক স্বরধ্বনির সংখ্যা পঁচিশ ।
আ + ই = আই (যাই, ভাই); আ + উ = আউ (লাউ); আ + এ = আয় (যায়, খায়); আ + ও = আও (যাও, খাও); ই + ই = ইই (দিই); ই + উ = ইউ (শিউলি); ই + এ = ইয়ে (বিয়ে); ই + ও = ইও (নিও, দিও); উ + ই = উই (উই, শুই); উ + আ উয়া (কুয়া); এ + আ=এয়া (কেয়া, দেয়া); এ + ই = এই (সেই, নেই); এ + ও = এও (খেও); ও + ও = ওও (শোও)।
বাংলা বর্ণমালায় যৌগিক স্বরজ্ঞাপক দুটো বর্ণ রয়েছে: ঐ এবং ঔ। উদাহরণ : কৈ, বৌ। অন্য যৌগিক স্বরের চিহ্ন স্বরূপ কোনো বর্ণ নেই ৷
ব্যঞ্জনধ্বনির বিভাগ ও উচ্চারণগত নাম
আগে আমরা দেখেছি যে, পাঁচটি বর্গ বা গুচ্ছে প্রত্যকটিতে পাঁচটি বর্ণ পাওয়া যায়। এগুলো স্পৃষ্ট ধ্বনিজ্ঞাপক। ক থেকে ম পর্যন্ত এ পঁচিশটি ব্যঞ্জনকে স্পর্শ ব্যঞ্জন বা স্পৃষ্ট ব্যঞ্জনধ্বনি বলে। উচ্চারণ বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী স্পর্শ ব্যঞ্জনধ্বনিগুলোকে প্রথমত দুই ভাগে ভাগ করা যায় : ১. অঘোষ এবং ২. ঘোষ।
১. যে ধ্বনি উচ্চারণের সময় স্বরতন্ত্রী অনুরণিত হয় না, তাকে বলা হয় অঘোষ ধ্বনি। যেমন- ক, খ, চ, ছ ইত্যাদি।
২. যে ধ্বনি উচ্চারণের সময় স্বরতন্ত্রী অনুরণিত হয়, তাকে বলে ঘোষ ধ্বনি। যেমন-গ, ঘ, জ, ঝ ইত্যাদি ।
এগুলোকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা যায় : ক. অল্পপ্রাণ এবং খ. মহাপ্রাণ ।
ক. যে ধ্বনি উচ্চারণের সময় বাতাসের চাপের স্বল্পতা থাকে, তাকে বলা হয় অল্পপ্রাণ ধ্বনি। যেমন-ক, গ, চ, জ ইত্যাদি ।
খ. যে ধ্বনি উচ্চারণের সময় বাতাসের চাপের আধিক্য থাকে, তাকে বলা হয় মহাপ্রাণ ধ্বনি। যেমন-খ, ঘ, ছ, ঝ ইত্যাদি ।
উষ্মধ্বনি : শ, ষ, স, হ – এ চারটি বর্ণে দ্যোতিত ধ্বনি উচ্চারণের সময় আমরা শ্বাস যতক্ষণ খুশি রাখতে
পারি। এগুলোকে বলা হয় উষ্মধ্বনি বা শিশধ্বনি। এ বর্ণগুলোকে বলা হয় উষ্মবর্ণ।
শ ষ স – এ তিনটি বর্ণে দ্যোতিত ধ্বনি অঘোষ অল্পপ্রাণ, আর ‘হ’ ঘোষ মহাপ্রাণ ধ্বনি ।
অন্তঃস্থ ধ্বনি : য্ (Y) এবং ব্ (W) এ দুটো বর্ণে দ্যোতিত ধ্বনির উচ্চারণ স্থান স্পর্শ ও উষ্মধ্বনির মাঝামাঝি। এজন্য এদের বলা হয় অন্তঃস্থ ধ্বনি।
ধ্বনির উচ্চারণ বিধি
স্বরধ্বনির উচ্চারণ
ই এবং ঈ-ধ্বনির উচ্চারণে জিহবা এগিয়ে আসে এবং উচ্চে অগ্রতালুর কঠিনাংশের কাছাকাছি পৌঁছে। এ ধ্বনির উচ্চারণে জিহবার অবস্থান ই-ধ্বনির মতো সম্মুখেই হয়, কিন্তু একটু নিচে এবং আ-ধ্বনির বেলায় আরও নিচে। ই ঈ এ (অ) ধ্বনির উচ্চারণে জিহবা এগিয়ে সম্মুখভাগে দাঁতের দিকে আসে বলে এগুলোকে বলা হয় সম্মুখ ধ্বনি। ই এবং ঈ-র উচ্চারণের বেলায় জিহবা উচ্চে থাকে। তাই এগুলো উচ্চসম্মুখ স্বরধ্বনি। এ মধ্যাবস্থিত সম্মুখ স্বরধ্বনি এবং আ নিম্নাবস্থিত সম্মুখ স্বরধ্বনি।
উ এবং ঊ-ধ্বনি উচ্চারণে জিহ্বা পিছিয়ে আসে এবং পশ্চাৎ তালুর কোমল অংশের কাছাকাছি ওঠে। ও-ধ্বনির উচ্চারণে জিহবা আরও একটু নিচে আসে। অ-ধ্বনির বেলায় তার চেয়েও নিচে আসে। উ ঊ ও অ-ধ্বনির উচ্চারণে জিহবা পিছিয়ে আসে বলে এগুলোকে পশ্চাৎ স্বরধ্বনি বলা হয়। উ ও ঊ-ধ্বনির উচ্চারণকালে জিহ্বা উচ্চে থাকে বলে এদের বলা হয় উচ্চ পশ্চাৎ স্বরধ্বনি ও মধ্যাবস্থিত পশ্চাৎ স্বরধ্বনি এবং অ-নিম্নাবস্থিত পশ্চাৎ স্বরধ্বনি।
বাংলা আ-ধ্বনির উচ্চারণে জিহবা সাধারণত শায়িত অবস্থায় থাকে এবং কণ্ঠের দিকে আকৃষ্ট হয় এবং মুখের সম্মুখ ও পশ্চাৎ অংশের মাঝামাঝি বা কেন্দ্রস্থানীয় অংশে অবস্থিত বলে আ-কে কেন্দ্রীয় নিম্নাবস্থিত স্বরধ্বনি এবং বিবৃত ধ্বনিও বলা হয় ।
শব্দে অবস্থানভেদে অ দুইভাবে লিখিত হয়
১. স্বাধীনভাবে ব্যবহৃত অ। যেমন—অমর, অনেক।
২. শব্দের মধ্যে অন্য বর্ণের সঙ্গে বিলীনভাবে ব্যবহৃত অ। যেমন— কর, বল। এখানে ক এবং র আর ব এবং ল বর্ণের সঙ্গে অ বিলীন হয়ে আছে। (ক্ + অ + র্ + অ; ব্+ অ + ল্ + অ)।
শব্দের অ-ধ্বনির দুই রকম উচ্চারণ পাওয়া যায়
১. বিবৃত বা স্বাভাবিক উচ্চারণ। যেমন— অমল, অনেক, কত।
২. সংবৃত বা ও-ধ্বনির মতো উচ্চারণ। যথা— অধীর, অতুল, মন। এ উচ্চারণগুলোতে অ-এর উচ্চারণ অনেকটা ও-এর মতো (ওধীর, ওতুল, মোন) ।
১. ‘অ’-ধ্বনির স্বাভাবিক বা বিবৃত উচ্চারণ
(ক) শব্দের আদিতে
১. শব্দের আদিতে না-বোধক ‘অ’ যেমন - অটল, অনাচার ।
২. ‘অ’ কিংবা ‘আ’–যুক্ত ধ্বনির পূর্ববর্তী অ-ধ্বনি বিবৃত হয়। যেমন – অমানিশা, কথা ।
(খ) শব্দের মধ্যে ও অন্তে
কলম, ১. পূর্ব স্বরের সঙ্গে মিল রেখে স্বরসঙ্গতির কারণে বিবৃত ‘অ’। যেমন - বৈধতা, যত, শ্রেয়ঃ।
২. ঋ-ধ্বনি, এ-ধ্বনি, ঐ-ধ্বনি এবং ঔ-ধ্বনির পরবর্তী ‘অ’ প্রায়ই বিবৃত হয়। যেমন – তৃণ, দেব, ধৈর্য, নোলক, মৌন ইত্যাদি।
৩. অনেক সময় ই-ধ্বনির পরের ‘অ’ বিবৃত হয়। যেমন – গঠিত, মিত, জনিত ইত্যাদি।
২. অ-ধ্বনির সংবৃত উচ্চারণ
অ-ধ্বনির বিবৃত উচ্চারণে চোয়াল বেশি ফাঁক হয়। ঠোঁট তত বাঁকা বা গোল হয় না। কিন্তু সংবৃত উচ্চারণে চোয়ালের ফাঁক কম ও ঠোঁট গোলাকৃত হয়ে ‘ও’–এর মতো উচ্চারিত হয়। সংবৃত উচ্চারণকে 'বিকৃত', ‘অপ্রকৃত’ বা ‘অস্বাভাবিক' উচ্চারণ বলা ঠিক নয়। সংবৃত উচ্চারণও ‘স্বাভাবিক’, ‘অবিকৃত’ ও ‘প্রকৃত’ উচ্চারণ।
(ক) শব্দের আদিতে
১. পরবর্তী স্বর সংবৃত হলে শব্দের আদি ‘অ’ সংবৃত হয়। যেমন— অতি (ওতি), করুণ (কোরুণ), করে (অসমাপিকা ‘কোরে’)। কিন্তু সমাপিকা ‘করে' শব্দের ‘অ’ বিবৃত।
২. পরবর্তী ই, উ – ইত্যাদির প্রভাবে পূর্ববর্তী র-ফলাযুক্ত ‘অ' সংবৃত হয়। যেমন – প্রতিভা (প্রোতিভা), প্রচুর (প্রোচুর) ইত্যাদি। কিন্তু অ, আ ইত্যাদির প্রভাবে পূর্ব ‘অ’ বিবৃত হয়। যেমন—প্রভাত, প্রত্যয়, প্রণাম ইত্যাদি।
(খ) শব্দের মধ্যে ও অন্তে
১. তর, তম, তন প্রত্যয়যুক্ত বিশ্লেষণ পদের অন্ত্য স্বর ‘অ' সংবৃত হয়। যেমন – প্রিয়তম (প্রিয়তমো), গুরুতর (গুরুতরো) ইত্যাদি।
২. ই, উ-এর পরবর্তী মধ্য ও অন্ত্য ‘অ’ সংবৃত। যেমন – পিয় (পিয়ো), যাবতীয় (যাবতীয়ো) ইত্যাদি।
আ : বাংলায় আ-ধ্বনি একটি বিবৃত স্বর। এর উচ্চারণ হ্রস্ব ও দীর্ঘ দু-ই হতে পারে। এর উচ্চারণ অনেকটা ইংরেজি ফাদার (father) ও কাম (calm) শব্দের আ (a)-এর মতো। যেমন- আপন, বাড়ি, মা, দাতা ইত্যাদি।
বাংলায় একাক্ষর (Monosyllabic) শব্দে আ দীর্ঘ হয়। যেমন— কাজ শব্দের আ দীর্ঘ এবং কাল শব্দের আ হ্রস্ব। এরূপ— যা, পান, ধান, সাজ, চাল, চাঁদ, বাঁশ।
ই ঈ : বাংলায় সাধারণত হ্রস্ব ই-ধ্বনি এবং দীর্ঘ ঈ-ধ্বনির উচ্চারণে কোনো পার্থক্য দেখা যায় না। একাক্ষর শব্দের ই এবং ঈ – দুটোই দীর্ঘ হয়। যেমন— বিষ, বিশ, দীন, দিন, শীত। -
উ উ : বাংলায় উ এবং ঊ ধ্বনির উচ্চারণে তেমন কোনো পার্থক্য দেখা যায় না। ই ঈ-ধ্বনির মতো একাক্ষর শব্দে এবং বহু অক্ষর-বিশিষ্ট শব্দের বদ্ধাক্ষরে বা প্রান্তিক যুক্তাক্ষরে উচ্চারণ সামান্য দীর্ঘ হয়। যেমন— চুল (দীর্ঘ), চুলা (হ্রস্ব), ভূত, মুক্ত, তুলতুলে, তুফান, বহু, অজু, করুণ ।
ঋ : স্বাধীনভাবে ব্যবহৃত হলে ঋ-এর উচ্চারণ রি অথবা রী-এর মতো হয়। আর ব্যঞ্জন ধ্বনির সঙ্গে যুক্ত হয়ে ব্যবহৃত হলে র-ফলা+ ই-কার এর মতো হয়। যেমন— ঋণ, ঋতু, (রীন, রীতু), মাতৃ (মাত্রি), কৃষ্টি (ক্রিষ্টি) ।
দ্রষ্টব্য : বাংলায় ঋধ্বনিকে স্বরধ্বনি বলা চলে না। সংস্কৃতে এই ধ্বনিটি স্বরধ্বনিরূপে উচ্চারিত হয়।
সংস্কৃত প্রয়োগ অনুসারেই বাংলা বর্ণমালায় এটি স্বরবর্ণের মধ্যে রক্ষিত হয়েছে।
এ : এ-ধ্বনির উচ্চারণ দুই রকম : সংবৃত ও বিবৃত। যেমন – মেঘ, সংবৃত/বিবৃত, খেলা-(খ্যালা), বিবৃত।
১. সংবৃত
ক) পদের অন্তে ‘এ’ সংবৃত হয়। যেমন— পথে, ঘাটে, দোষে, গুণে, আসে ইত্যাদি ।
খ) তৎসম শব্দের প্রথমে ব্যঞ্জনধ্বনির সঙ্গে যুক্ত এ-ধ্বনির উচ্চারণ সংবৃত হয়। যেমন— দেশ, প্রেম, শেষ ইত্যাদি ।
গ) একাক্ষর সর্বনাম পদের ‘এ' সংবৃত হয়। যেমন— কে, সে, যে
ঘ) ‘হ’ কিংবা আকারবিহীন যুক্তধ্বনি পরে থাকলে ‘এ' সংবৃত হয়। যেমন— দেহ, কেহ, কেষ্ট।
ঙ) ‘ই’ বা ‘উ’–কার পরে থাকলে ‘এ' সংবৃত হয়। যেমন – দেখি, রেণু, বেলুন ।
২. বিবৃত : ‘এ’ ধ্বনির বিবৃত উচ্চারণ ইংরেজি ক্যাট (cat) ও ব্যাট (bat)-এর ‘এ’ (a)-এর মতো। যেমন— দেখ (দ্যাখ), একা (এ্যাকা) ইত্যাদি ।
এ— ধ্বনির এই বিবৃত উচ্চারণ কেবল শব্দের আদিতেই পাওয়া যায়, শব্দের মধ্যে ও অন্তে পাওয়া যায় না ৷
ক) দুই অক্ষর বিশিষ্ট সর্বনাম বা অব্যয় পদে— যেমন : এত, হেন, কেন ইত্যাদি। কিন্তু ব্যতিক্রম-
যেথা, সেথা, হেথা ।
খ) অনুস্বার ও চন্দ্রবিন্দু যুক্ত ধ্বনির আগের এ-ধ্বনি বিবৃত। যেমন—খেংড়া, চেংড়া, স্যাঁতসেঁতে গেঁজেল।
গ) খাঁটি বাংলা শব্দে : যেমন— খেমটা, ঢেপসা, তেলাপোকা, তেনা, দেওর।
ঘ) এক, এগার, তের – এ কয়টি সংখ্যাবাচক শব্দে, ‘এক’ যুক্ত শব্দেও : যেমন— একচোট, একতলা, একঘরে ইত্যাদি।
ঙ) ক্রিয়াপদের বর্তমান কালের অনুজ্ঞায়, তুচ্ছার্থ ও সাধারণ মধ্যম পুরুষের রূপে; যেমন— দেখ্ (দ্যাখ), দেখ (দ্যাখো), খেল্ (খ্যাল), খেল (খ্যালো), ফেল্ (ফ্যাল্), ফেল (ফ্যালো) ইত্যাদি।
ঐ: এ ধ্বনিটি একটি যৌগিক স্বরধ্বনি। অ + ই কিংবা ও + ই = অই, ওই। অ এবং ই- এ দুটো স্বরের মিলিত ধ্বনিতে ঐ-ধ্বনির সৃষ্টি হয়। যেমন - ক্ + অ + ই = কই, কৈ; ব্ + ই + ধ বৈধ = ইত্যাদি। এরূপ বৈদেশিক, ঐক্য, চৈতন্য। -
ও: বাংলা একাক্ষর শব্দে ও-কার দীর্ঘ হয়। যেমন— গো, জোর, রোগ, ভোর, কোন, বোন ইত্যাদি। অন্যত্র সাধারণত হ্রস্ব হয়। যেমন— সোনা, কারো, পুরোভাগ। ও-এর উচ্চারণ ইংরেজি বোট (boat) শব্দের (oa)-এর মতো।
ব্যঞ্জনধ্বনির উচ্চারণ
ক-বর্গীয় ধ্বনি : ক খ গ ঘ ঙ এ পাঁচটি বর্ণে দ্যোতিত ধ্বনির উচ্চারণ জিহ্বার গোড়ার দিকে নরম তালুর পশ্চাৎ ভাগ স্পর্শ করে। এগুলো জিহ্বামূলীয় বা কণ্ঠ্য স্পর্শধ্বনি।
চ-বর্গীয় ধ্বনি : চ ছ জ ঝ ঞ—এ পাঁচটি বর্ণে দ্যোতিত ধ্বনির উচ্চারণে জিহ্বার অগ্রভাগ চ্যাপটাভাবে তালুর সম্মুখ ভাগের সঙ্গে ঘর্ষণ করে। এদের বলা হয় তালব্য স্পর্শধ্বনি।
ট-বর্গীয় ধ্বনি : ট ঠ ড ঢ ণ - এ পাঁচটি বর্ণে দ্যোতিত ধ্বনির উচ্চারণে জিহ্বার অগ্রভাগ কিঞ্চিৎ উল্টিয়ে ওপরের মাড়ির গোড়ার শক্ত অংশকে স্পর্শ করে। এগুলোর উচ্চারণে জিহ্বা উল্টা হয় বলে এদের নাম দন্তমূলীয় প্রতিবেষ্টিত ধ্বনি। আবার এগুলো ওপরের মাড়ির গোড়ার শক্ত অংশ অর্থাৎ মূর্ধায় স্পর্শ করে উচ্চারিত হয় বলে এদের বলা হয় মূর্ধন্য ধ্বনি।
ত-বর্গীয় ধ্বনি : ত থ দ ধ ন— এ পাঁচটি বর্ণে দ্যোতিত ধ্বনির উচ্চারণে জিহ্বা সম্মুখে প্রসারিত হয় এবং অগ্রভাগ ওপরের দাঁতের পাটির গোড়ার দিকে স্পর্শ করে। এদের বলা হয় দন্ত্য ধ্বনি । প-বর্গীয় ধ্বনি : প ফ ব ভ ম – এ পাঁচটি বর্ণে দ্যোতিত ধ্বনির উচ্চারণে ওষ্ঠের সঙ্গে অধরের স্পর্শ ঘটে। এদের ওষ্ঠ্যধ্বনি বলে।
জ্ঞাতব্য
(১) ক থেকে ম পর্যন্ত পাঁচটি বর্গে মোট পঁচিশটি ধ্বনি। এসব ধ্বনির উচ্চারণে জিহ্বার সঙ্গে অন্য বাগযন্ত্রের কোনো কোনো অংশের কিংবা ওষ্ঠের সঙ্গে অধরের স্পর্শ ঘটে; অর্থাৎ এদের উচ্চারণে বাপ্রত্যঙ্গের কোথাও না কোথাও ফুসফুসতাড়িত বাতাস বাধা পেয়ে বেরিয়ে যায়। বাধা পেয়ে স্পষ্ট হয় বলে এগুলোকে বলে স্পর্শ ধ্বনি।
(২) ঙ ঞ ণ ন ম – এ পাঁচটি বর্ণে দ্যোতিত ধ্বনির উচ্চারণে নাক ও মুখ দিয়ে কিংবা কেবল নাক দিয়ে ফুসফুস-তাড়িত বাতাস বের হয় বলে এদের বলা হয় নাসিক্য ধ্বনি এবং প্রতীকী বর্ণগুলোকে বলা হয় নাসিক্য বর্ণ ।
(৩) চন্দ্রবিন্দু চিহ্ন বা প্রতীকটি পরবর্তী স্বরধ্বনির অনুনাসিকতার দ্যোতনা করে। এজন্য এটিকে অনুনাসিক ধ্বনি এবং প্রতীকটিকে অনুনাসিক প্রতীক বা বর্ণ বলে। যেমন— আঁকা, চাঁদ, বাঁধ, বাঁকা, শাঁস ইত্যাদি।
(৪) বাংলায় ঙ এবং ং বর্ণের দ্যোতিত ধ্বনিদ্বয়ে কোনো পার্থক্য লক্ষিত হয় না। যেমন-রঙ / রং, অহংকার / অহঙ্কার ইত্যাদি।
(৫) ঞ বর্ণের দ্যোতিত ধ্বনি অনেকটা ‘ইয়’–এর উচ্চারণে প্রাপ্ত ধ্বনির মতো। যেমন – ভূঞা (ভূঁইয়া)।
(৬) চ-বর্গীয় ধ্বনির আগে থাকলে ঞ-এর উচ্চারণ বৈশিষ্ট্য বজায় থাকে। যেমন – জঞ্জাল, খঞ্জ ইত্যাদি।
(৭) বাংলায় ণ এবং ন-বর্ণের দ্যোতিত ধ্বনি দুটির উচ্চারণে কোনো পার্থক্য নেই। কেবল ট-বর্গীয় ধ্বনির আগে যুক্ত হলে ণ-এর মূর্ধন্য উচ্চারণ পাওয়া যায়। যেমন – ঘণ্টা, লণ্ঠন ইত্যাদি।
(৮) ঙ ঞ এ তিনটি বর্ণে দ্যোতিত ধ্বনি কখনো শব্দের প্রথমে আসে না, শব্দের মধ্যে কিংবা শেষে আসে। সুতরাং এসব ধ্বনির প্রতীক বর্ণও শব্দের আদিতে ব্যবহৃত হয় না, শব্দের মধ্যে বা অন্তে ব্যবহৃত হয়। যেমন— সঙ্ঘ বা সংঘ, ব্যাঙ বা ব্যাং, অঞ্জনা, ভূঞা, ক্ষণ ইত্যাদি।
(৯) ন-বর্ণে দ্যোতিত ধ্বনি শব্দের আদি, মধ্য ও অন্ত তিন জায়গায়ই ব্যবহৃত হয়। যেমন— নাম, বানান, বন ইত্যাদি ।
অল্পপ্রাণ ও মহাপ্রাণ এবং ঘোষ ও অঘোষ ধ্বনি
স্পর্শধ্বনি বা বর্গীয় ধ্বনিগুলোকে উচ্চারণরীতির দিক থেকে অল্পপ্রাণ ও মহাপ্রাণ, অঘোষ ও ঘোষ প্রভৃতি ভাগে ভাগ করা হয়।
অল্পপ্রাণ ধ্বনি : কোনো কোনো ধ্বনি উচ্চারণের সময় নিঃশ্বাস জোরে সংযোজিত হয় না। এরূপ ধ্বনিকে বলা হয় অল্পপ্রাণ ধ্বনি (Unaspirated)। যেমন—ক, গ ইত্যাদি । মহাপ্রাণ ধ্বনি : কোনো কোনো ধ্বনি উচ্চারণের সময় নিঃশ্বাস জোরে সংযোজিত হয়। এরূপ ধ্বনিকে বলা হয় মহাপ্রাণ ধ্বনি (Aspirated)। যেমন— খ, ঘ ইত্যাদি।
অঘোষ ধ্বনি : কোনো কোনো ধ্বনি উচ্চারণের সময় স্বরতন্ত্রী অনুরণিত হয় না। তখন ধ্বনিটির উচ্চারণ গাম্ভীর্যহীন ও মৃদু হয়। এরূপ ধ্বনিকে বলা হয় অঘোষ ধ্বনি (Unvoiced)। যেমন— ক, খ ইত্যাদি। ঘোষ ধ্বনি ইত্যাদি।
ঘোষ: ধ্বনি উচ্চারণের সময় স্বরতন্ত্রী অনুরণিত হলে ঘোষ ধ্বনি (Voiced) হয়। যেমন— গ, ঘ
অল্পপ্রাণ ও মহাপ্রাণ এবং অঘোষ ও ঘোষ স্পর্শ ব্যঞ্জন ও নাসিক্য ব্যঞ্জনগুলোকে নিচের ছকে দেখানো হলো—
অন্তঃস্থ ধ্বনি : স্পর্শ বা উষ্ম ধ্বনির অন্তরে অর্থাৎ মাঝে আছে বলে য র ল ব-এ ধ্বনিগুলোকে অন্তঃস্থ ধ্বনি বলা হয় আর বর্ণগুলোকে বলা হয় অন্তঃস্থ বর্ণ।
য : য-বর্ণে দ্যোতিত ধ্বনি সাধারণত সম্মুখ তালু স্পর্শ করে উচ্চারিত হয়। এজন্য এ ধ্বনিটিকে বলা হয় তালব্য ধ্বনি। শব্দের আদিতে ব্যবহৃত হলে বাংলায় এর উচ্চারণ ‘জ'-এর মতো। যেমন - যখন, যাবেন, যুদ্ধ, যম ইত্যাদি। শব্দের মধ্যে বা অন্তে (সংস্কৃত নিয়মানুযায়ী) ব্যবহৃত হলে ‘য়’ উচ্চারিত হয়। যেমন – 1 বি + যোগ = বিয়োগ ।
র : র-বর্ণে দ্যোতিত ধ্বনি জিহ্বার অগ্রভাগকে কম্পিত করে এবং তদ্বারা দন্তমূলকে একাধিকবার দ্রুত আঘাত করে উচ্চারিত হয়। জিহ্বাগ্রকে কম্পিত করা হয় বলে এ ধ্বনিকে কম্পনজাত ধ্বনি বলা হয়। উদাহরণ রাহাত, আরাম, বাজার ইত্যাদি।
ল : ল-বর্ণে দ্যোতিত ধ্বনি উচ্চারণে জিহ্বার অগ্রভাগকে মুখের মাঝামাঝি দত্তমূলে ঠেকিয়ে রেখে জিহ্বার দুই পাশ দিয়ে মুখবিবর থেকে বায়ু বের করে দেয়া হয়। দুই পাশ দিয়ে বায়ু নিঃসৃত হয় বলে একে পার্শ্বিক ধ্বনি বলা হয়। যেমন – লাল, লতা, কলরব, ফল, ফসল।
ব : বাংলা বর্ণমালায় বর্গীয়-ব এবং অন্তঃস্থ-ব-এর আকৃতিতে কোনো পার্থক্য নেই। আগে বর্গীয় ও অন্তঃস্থ- এ দুই রকমের ব-এর লেখার আকৃতিও পৃথক ছিল, উচ্চারণও আলাদা ছিল। এখন আকৃতি ও উচ্চারণ অভিন বলে অন্তঃস্থ-ব কে বর্ণমালা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। প্রকৃত প্রস্তাবে অন্তস্থ ‘য’ ও অন্তঃস্থ ‘ব’- এ দুটো অবস্বর (Semivowel)। প্রথমটি অয় বা ইয় (y) এবং দ্বিতীয়টি অব বা অও (w)-র মতো। যেমন নেওয়া, হওয়া ইত্যাদি ।
উষ্মধ্বনি : যে ব্যঞ্জনের উচ্চারণে বাতাস মুখবিবরে কোথাও বাধা না পেয়ে কেবল ঘর্ষণপ্রাপ্ত হয় এবং শিশধ্বনির সৃষ্টি করে, সেটি উষ্মধ্বনি। যেমন— আশীষ, শিশি, শিশু ইত্যাদি। শিশ দেয়ার সঙ্গে এর সাদৃশ্য রয়েছে বলে একে শিশধ্বনিও বলা হয়।
শ, ষ, স – তিনটি উষ্ম বর্ণ। শ-বর্ণে দ্যোতিত ধ্বনির উচ্চারণ স্থান পশ্চাৎ দন্তমূল। ষ-বর্ণে দ্যোতিত ধ্বনির - উচ্চারণ স্থান মূর্ধা এবং স-বর্ণে দ্যোতিত ধ্বনির উচ্চারণ স্থান দত্ত।
স্খলন,
লক্ষণীয় : স-এর সঙ্গে খ র ত থ কিংবা ন যুক্ত হলে স-এর দন্ত্য উচ্চারণ হয়। যেমন স্ৰষ্টা, আস্ত, স্থাপন, স্নেহ ইত্যাদি। আবার বানানে (লেখায়) শ থাকলেও উচ্চারণ দন্ত্য-স হয়। যেমন শ্রমিক (শ্রমিক), শৃঙ্খল (সৃঙ্খল), প্রশ্ন (প্রস)।
অঘোষ অল্পপ্রাণ ও অঘোষ মহাপ্রাণ মূর্ধন্যধ্বনি (ট ও ঠ)-এর আগে এলে স-এর উচ্চারণ মূর্ধন্য ষ হয়। যেমন- কষ্ট, কাষ্ঠ ইত্যাদি।
হ : হ-বর্ণে দ্যোতিত ধ্বনিটি কণ্ঠনালীতে উৎপন্ন মূল উম্ম ঘোষধ্বনি। এ উষ্মধ্বনিটি উচ্চারণের সময় উন্মুক্ত কণ্ঠের মধ্য দিয়ে বাতাস জোরে নির্গত হয়। যেমন – হাত, মহা, পহেলা ইত্যাদি । ২০১৮
ং (অনুস্বার) : ং এর উচ্চারণ ঙ -এর উচ্চারণের মতো। যেমন – রং (রঙ), বাংলা (বাঙলা) ইত্যাদি। উচ্চারণে অভিন্ন হয়ে যাওয়ায় ং-এর বদলে ও এবং ঙ-এর বদলে ং-এর ব্যবহার খুবই সাধারণ।
ঃ (বিসর্গ) : বিসর্গ হলো অঘোষ 'হ'-এর উচ্চারণে প্রাপ্ত ধ্বনি। হ-এর উচ্চারণ ঘোষ, কিন্তু ঃ এর উচ্চারণ অঘোষ। বাংলায় একমাত্র বিস্ময়াদি প্রকাশক অব্যয়েই বিসর্গের ধ্বনি শোনা যায়। যথা— আঃ, উঃ, ওঃ, বাঃ ইত্যাদি। সাধারণত বাংলায় শব্দের অন্তে বিসর্গ প্রায়ই অনুচ্চারিত থাকে। যেমন . বিশেষতঃ (বিশেষত), ফলতঃ (ফলত)। পদের মধ্যে বিসর্গ থাকলে পরবর্তী ব্যঞ্জন দ্বিত্ব হয়। যেমন দুঃখ (দুখ), প্রাতঃকাল - (প্রাতকাল)।
ড় ও ঢ় : ড় ও ঢ়-বর্ণে দ্যোতিত ধ্বনি জিহ্বার অগ্রভাগের তলদেশ দ্বারা অর্থাৎ উল্টো পিঠের দ্বারা ওপরের দন্তমূলে দ্রুত আঘাত বা তাড়না করে উচ্চারিত হয়। এদের বলা হয় তাড়নজাত ধ্বনি। ড়-এর উচ্চারণ ড এবং র-এর দ্যোতিত ধ্বনিদ্বয়ের মাঝামাঝি এবং ঢ়-এর উচ্চারণ ড় এবং হ-এর দ্বারা দ্যোতিত ধ্বনিদ্বয়ের দ্রুত মিলিত ধ্বনি। যেমন – বড়, গাঢ়, রাঢ়, ইত্যাদি।
সংযুক্ত ব্যঞ্জনধ্বনি ও যুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণ
দুটি বা তার চেয়ে বেশি ব্যঞ্জনধ্বনির মধ্যে কোনো স্বরধ্বনি না থাকলে সে ব্যঞ্জনধ্বনি দুটি বা ধ্বনি কয়টি একত্রে উচ্চারিত হয়। এরূপ যুক্তব্যঞ্জনধ্বনির দ্যোতনার জন্য দুটি বা অধিক ব্যঞ্জনবর্ণ একত্রিত হয়ে সংযুক্ত বর্ণ (ligature) গঠিত হয়। সাধারণত এরূপে গঠিত সংযুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণের মূল বা আকৃতি পরিবর্তিত হয়। যেমন — তক্তা (ত্ + অ + ক্ + ত্ + আ তক্তা)। এখানে দ্বিতীয় বর্ণ ক ও ত-এর মূল রূপ পরিবর্তিত হয়ে ক্ত = হয়েছে। বাংলা ভাষায় সাধারণত তিনভাবে সংযুক্ত ব্যঞ্জন গঠিত হতে পারে। যথা :
ক. কার সহযোগে
খ. ফলা সহযোগে
গ. ব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে ব্যঞ্জনবর্ণ (ফলা ব্যতীত) সহযোগে।
ক. কার সহযোগে ঃ স্বরবর্ণ সংক্ষিপ্ত আকারে ব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে যুক্ত হলে তাকে বলে ‘কার’। অ-ভিন্ন অন্য দশটি স্বরধ্বনির সংক্ষিপ্ত রূপ হয়। সুতরাং বাংলায় কার দশটি। এগুলো যথাক্রমেঃ
আ-কার (1) বাবা, মা, চাকা ই-কার (f) – পাখি, বাড়ি, চিনি,
ঈ-কার (ী) – নীতি, শীত, স্ত্রী;
উ-কার () – খুকু, বুবু, ফুফু, -
ঊ-কার (,) – মূল্য, চূর্ণ, পূজা,
ঋ-কার (<) কৃতী, গৃহ, ঘৃত,
এ-কার (c) ছেলে, মেয়ে, ধেয়ে;
ঐ-কার ()ৈ বৈশাখ, চৈত্র, ধৈর্য,
ও-কার (CT) দোলা, তোতা, খোকা;
ঔ-কার (ৗে) পৌষ, গৌতম, কৌতুক ।
খ.১. ফলা সহযোগে : ব্যঞ্জনবর্ণের সংক্ষিপ্ত রূপকে বলে ফলা। ফলা যুক্ত হলে বর্ণের আকারের পরিবর্তন সাধিত হয়। বাংলা ব্যঞ্জনবর্ণের ফলা ছয়টি। যেমন-
ণ/ ন-ফলা (ণ/ও/১)− চিহ্ন, রত্ন, পূর্বাহ্ন, অপরাহ্ণ, বিষু, কৃষ্ণ। চিহ্ন-র • এবং কৃষ্ণ-র ও
ব ফলা (ব)— বিশ্বাস, নিঃস্ব, নিতম্ব।
ম ফলা (ম)— তন্ময়, পদ্ম, আত্মা।
য ফলা (j) – সহ্য, অত্যন্ত, বিদ্যা। -
র- ফলা (,)— গ্রহ, ব্ৰত, স্রষ্টা।
(´রেফ) – বর্ণ, স্বর্ণ, তর্ক, খৰ্ব।
ল ফলা (ল)— ক্লান্ত, অম্লান, উল্লাস ।
খ. ২. বাংলা স্বরবর্ণের সঙ্গেও ফলা যুক্ত হয়। যথা— এ্যাপোলো, এ্যাটম, অ্যাটর্নি, অ্যালার্ম ধ্বনি ইত্যাদি ।
খ. ৩. বাংলা যুক্ত ব্যঞ্জনের সাথেও কার এবং ফলা যুক্ত হয়ে শব্দ গঠিত হয়। যেমন – সন্ন্যাস, সূক্ষ্ম, রুক্মিণী, সন্ধ্যা, ইত্যাদি।
কতিপয় সংযুক্ত ব্যঞ্জন বর্ণ
দুই বর্ণের যুক্ত :
ক্ক =ক্+ক। যেমন— পাক্কা, ছক্কা, চক্কর।
ক্ত = ক্+ত। যেমন- রক্ত, শক্ত, ভক্ত।
ক্ষ= ক্+ষ। (উচ্চারণ ক্ +খ-এর মতো) যেমন— শিক্ষা, বক্ষ, রক্ষা।
ক্স= ক্+স। বাক্স ।
ক= ঙ+ক। যেমন- অঙ্ক, কঙ্কাল, লঙ্কা।
থ= ঙ+খ। যেমন— শৃঙ্খলা, শঙ্খ ।
ঙ্গ= ঙ+গ। যেমন- অঙ্গ, মঙ্গল, সঙ্গীত।
ঙ্ঘ = ঙ+ঘ। যেমন— সঙ্ঘ, লঙ্ঘন।
চ্চ= চ্ +চ। যেমন- উচ্চ, উচ্চারণ, উচ্চকিত।
চ্ছ= চ্+ছ। যেমন— উচ্ছল, উচ্ছৃঙ্খল, উচ্ছেদ ।
জ্জ= জ্+জ। যেমন— উজ্জীবন, উজ্জীবিত ।
জ্ঝ= জ্+ঝ। যেমন- কুঞ্ঝটিকা।
জ্ঞ= জ্ +ঞ। যেমন- উচ্চারণ ‘গ্য’— এর মতো) যেমন- জ্ঞান, সংজ্ঞা, বিজ্ঞান ৷
ঞ্চ ঞ্চ = ঞ+চ । যেমন- অঞ্চল, সঞ্চয়, পঞ্চম।
ঞ্ছ= ঞ +ছ। যেমন-বাঞ্ছিত, বাঞ্ছনীয়, বাঞ্ছা ।
ঞ্জ= ঞ্+জ। যেমন- গঞ্জ, রঞ্জন,
ঞ্ঝ= ঞ+ঝ। যেমন- ঝঞ্ঝা, ঝঞ্ঝাট।
[ বি. দ্র. উপর্যুক্ত চারটি সংযুক্ত বর্ণের উচ্চারণ ‘ন’ হলে ও লেখার সময় কখনো ন্চ (অন্চল), ন্ ছ (বান্ছা), ন্জ (গন্জ), নঝ (ঝন্ঝা) রূপে লেখা ঠিক নয়।
ট্ট= ট্ +ট। যেমন- অট্টালিকা, চট্টোপাধ্যায়, চট্টগ্রাম ৷ ড= ড্ +ড। যেমন- গড্ডালিকা, উড্ডীন, উড্ডয়ন।
ণ্ট= ণ্+ট। যেমন— ঘণ্টা, বণ্টন।
ত্ত= ত্ +ত। যেমন— উত্তম, বিত্ত, চিত্ত।
থ= ত্+থ। যেমন—উত্থান, উত্থিত, অভ্যুত্থান।
দ্দ= দ্ +দ। যেমন—উদ্দাম, উদ্দীপক, উদ্দেশ্য।
দ্ধ= দ্ +ধ। যেমন— উদ্ধত, উদ্ধৃত, পদ্ধতি
দ্ভ= দ্ +ভ। যেমন— উদ্ভব, উদ্ভট, উদ্ভিদ ।
ন্ত= ন্+ত। যেমন- অন্ত, দন্ত, কান্ত
ন্দ= ন্+দ। যেমন- আনন্দ, সন্দেশ, বন্দী ।
ন্ধ= ন্+ধ। যেমন- বন্ধন, রন্ধন, সন্ধান ।
ন্ন= ন্ +ন। যেমন— অন্ন, ছিন্ন, ভিন্ন।
ন্ম= ন্ +ম। যেমন- জন্ম, আজন্ম।
প্ত= প্ +ত। যেমন- রপ্ত, ব্যাপ্ত, লিপ্ত।
স্প= প্ +প। যেমন- পাপ্পা, পাম্পু, ধাপ্পা।
প্স= প্ +স। যেমন- লিপ্সা, অভীপ্সা।
জব্দ, ব্দ= ব্ +দ। যেমন — অব্দ, শব্দ।
স্ক= ল্ +ক। যেমন- উল্কা, বঙ্কল।
ল্প= ল্ +গ। যেমন- ফাল্গুন।
ল্ট= ল্ +ট। যেমন- উল্টা।
ষ্ক= ষ্ +ক। যেমন— শুষ্ক, পরিষ্কার, বহিষ্কার।
স্ক= স্ +ক। যেমন- স্কুল, স্কন্ধ ।
স্থ= স্ +খ। যেমন- স্খলন ।
স্ট= স+ট। যেমন- আগস্ট, স্টেশন।
স্ত= স্ +ত। যেমন- অস্ত, সস্তা, স্তব্ধ ৷
স্প= স্ +প। যেমন-স্পষ্ট, স্পন্দন, স্পর্ধা।
ফ= স্ +ফ। যেমন- স্ফটিক, প্রস্ফুটিত ।
হ্ম= হ্ +ম। যেমন- ব্ৰহ্ম, ব্রাহ্মণ।
এছাড়া বাংলা ভাষায় দুইয়ের অধিক বর্ণ সংযোগেও কিছু সংযুক্ত বর্ণ গঠিত হয়। সূক্ষ্ম শব্দে ক্ষ্ম বর্ণ= ক্
+ষ+ম- ফলা ; স্বাতন্ত্র্য শব্দের ন্ত্র্য=ন+ত+র-ফলা () +য-ফলা (্য) ইত্যাদি।
Read more